‘তুমি’ থেকে ‘তোমরা’

  • ‘তুমি’ থেকে ‘তোমরা’

    -রীণা চ্যাটার্জী

প্রিয় নারী
সমাজ বলেছে পোষাক দোষে দুষ্ট তুমি,তাই জন্য তুমি লাঞ্ছিতা, ধর্ষিতা। তোমার দোষেই পুরুষ হয়েছে বর্বর, তকমা গায়ে ধর্ষকের। উঠছে রব পোষাকে আনো শালীনতা। ওরা বলে দেবে তোমার কোন পোষাকে কেউ রিপু তাড়িত হবে না। কিন্তু প্রশ্ন এখানে তাতেও কি তুমি দোষী হবে না? সব বিধি নিষেধ মেনে নিলেও! উত্তর নেই- কারো কাছেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর বাড়ীতেও মেয়েদের শায়া,সেমিজ পরিধান অশ্লীলতা দায়ে দুষ্ট ছিল… যদিও নারী পোশাকের আধুনিকতার জন্ম ঠাকুর বাড়ীর দেউড়ী থেকেই জ্ঞানন্দানন্দিনীর রুচিশীলতার হাত ধরে। কিন্তু সেই পোশাক ও প্রাথমিক পর্যায়ে অশ্লীলতার দায়ে বহু আলোচিত সেই সময়ে। সীমা, সত্তা সব ওদের হাতে… তুমি কি ? সত্তাহীন পুতুল!
দেখি কবিতা,গল্প সবতেই খুব সাবলীল ভাবে উঠে আসে নারীদের গোপনীয়তা,অঙ্গ … সব। ডাকবে তোমাকে অশ্লীল নামে, আধুনিক হচ্ছে সাহিত্য অঙ্গন, হাত ধরে তোমার শরীরি আবেদনের! তবে তোমার অবদান মানা হবে না। ওদের ইচ্ছে ওরা ছুঁয়ে যাবে যেভাবে খুশী যতবার খুশী তোমার শরীর। জানার তো দরকার নেই তুমি চাও কি না! কবিতা আধুনিক হবে তোমার গোপনীয়তা ছুঁয়ে… তুমি হতে পারবে না আধুনিক, হলেই তুমি বেহায়া। তাই তো বারবধূ বারবণিতা তোমার নামে লাগতে পারে, বারপুরুষ নাম এলো না সমাজে! প্রশ্ন উঠলো না কেন তোমার নাম বারবধূ,বারবণিতা হলো! জানে সবাই ,কিন্তু চুউউপ…. দোষ তোমার। ভাঙ্গা গড়া ওদের হাতে… তুমি কি? মাটির পুতুল!

প্রতিবাদ হচ্ছে তোমার জন্য… কিসের প্রতিবাদ? কিভাবে প্রতিবাদ? প্রতিবাদের নামে কিছুটা আছে কৌতুহল,কতটা লাঞ্ছিতা তুমি? কতটা উন্মুক্ত করতে পেরেছে তোমাকে? কতটা ছিন্ন, ভিন্ন, রক্তাক্ত হয়েছ তুমি? শুধু মুখ আর নামটুকু আবরণ করে বারবার তুমি হবে খবরের শিরোনাম। আরো একটি ‘তুমি’ পাওয়ার অপেক্ষা, আবার পুরোনো চোখ নতুন শিরোনাম। ‘তুমি’ বিস্মৃতির অতলে। কেউ জানতে চাইবে না তুমি কি চাও। ওদের ইচ্ছায়, ওদের প্রয়োজনে তুমি বিখ্যাত… তারপর? ইচ্ছা, প্রয়োজন সব ওদের… তুমি কি? অন্তঃসারশূন্য পুতুল!,

অসাড়, অন্তঃসারশূন্য, মাটির পুতুল চাই ওদের। প্রয়োজনে নামাবে, রাখবে, গোছাবে, ফেলে দেবে… সব সব নিজের ইচ্ছে মতো। মাঝে কিছু দরদী হাত ধূলো ছেড়ে তোমাকে তুলে রাখবে, কিংবা নিষ্ঠুরতার হাত তোমাকে জ্বালিয়ে কিংবা ছিঁড়ে দেবে.. ওদের ইচ্ছে।

সময় হয়তো এসেছে ভাবার…’তুমি’ থেকে ‘তোমরা’ হবার। প্রতিবাদ হোক ‘তোমাদের’, ইচ্ছে থাকুক ‘তোমাদের’, স্বাধীনতা হোক ‘তোমাদের’। অনুগামী তো অনেক দিন ছিলে, আজ অধিকারী হতে হবে। সমবেত হবার সময়  এসেছে আগামীকাল সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে। হাতে হাত দিয়ে এগিয়ে দেখি না হয় ‘তুমি’ ছেড়ে ‘তোমরা’ হয়ে…।
তোমাদের আহ্বানী

Loading

8 thoughts on “‘তুমি’ থেকে ‘তোমরা’

  1. ধন্যবাদ।তবে এটি ঠিক উপস্থাপনা নয়,বহু বঞ্চিত দিনের একটি প্রতিবাদ।

  2. এক হও তুমি থেকে তোমরা। অদৃশ্য হোক পরাধীনতার শৃঙ্খল।

    1. ধন্যবাদ। সত্যি শৃঙ্খল মুক্তি আজ কাম্য…

  3. অপূর্ব হয়েছে লেখাটা,, সত্যি আজ ‘আমি ‘ থেকে ‘আমরা’ ‘হবার সময় এসেছে….

    1. আমাদের মাঝে বিদ্রোহ শেষ হয়ে, আমরা মিলে বিদ্রোহ শুরু হোক…নাহয়

Leave A Comment